পরকালের জন্য যারা আমল করে তারাই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি। কারণ, আখেরাত দুনিয়ার তুলনায় উত্তম ও চিরস্থায়ী। সবচেয়ে বোকা লোক তারাই যারা দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়, চিরস্থায়ী আবাসস্থল বলে মনে করে। এতেই তাদের সব আশা ভরসা। এরা যখন বিপদে পড়ে তখন আপনি এদেরকে সবচেয়ে বেশি দুঃখিত দেখতে পাবেন। পার্থিব ক্ষতির কারণে তারা সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয় শুধু এ কারণে যে, তারা যে তুচ্ছ জীবনযাপন করে এর বাইরে তারা কোনো কিছুই দেখতে পায় না। তারা শুধু এই অস্থায়ী জীবনটাই দেখে এবং শুধু এর কথাই ভাবে। তারা চায় না যে, কোন কিছু তাদের পরম সুখকে বিলীন করে দিক। যদি তাদের দৃষ্টি থেকে মূর্খতার পর্দা সরানো হতো তবে তারা চিরস্থায়ী আবাস এর নেয়ামত, আনন্দ ও প্রাসাদ সমূহের সাথে একাত্ববোধ করতো ও কোরআন সুন্নাহের মাধ্যমে তাদের আখেরাত সম্বন্ধে অবহিত করা হলে তারা তা মনোযোগ সহকারে শুনতো।
প্রকৃত অর্থে আমাদের উচিত আখেরাতের জীবনের প্রতি মনোনিবেশ করা। ঐ বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির করা, যাতে আমরা এর সর্বোত্তমটি
হতাশ হবেন
(জান্নাতুল ফেরদাউস) অর্জন করতে পারি। জান্নাতবাসীদের বর্ণনা সম্বন্ধে আমরা কি বিস্তারিত ভাবে চিন্তাভাবনা করে দেখেছি? তাঁরা অসুস্থ হবে না, দুঃখ তাঁদের কাছেও ঘেঁষবে না, তাঁরা মৃত্যুবরণ করবে না, তাঁরা থাকবে চিরকুমার এবং তাঁদের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে উত্তম, নিখুঁত ও পরিচ্ছন্ন। তাঁরা অবস্থান করবে সুন্দর গৃহে। জান্নাতে এমন জিনিস পাওয়া যাবে, যা কোনো চক্ষু কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শোনেনি এবং কোনো মানব হৃদয় কখনো যার কল্পনাও করেনি। আরোহী ব্যক্তি একশ বছর একটি গাছের নিচে ভ্রমণ করেও এর শেষ সীমায় পৌঁছতে পারবে না। জান্নাতে একটি তাঁবুর দৈর্ঘ্য হবে ষাট
মাইল। জান্নাতের নদীগুলো সদা প্রবাহিত, এর প্রাসাদগুলো বিশাল বিশাল এবং এর ফলগুলো শুধু হাতের নাগালের মধ্যেই নয়; এমনকি অতি সহজেই ধরা যাবে। মন চাওয়া মাত্রই হাতে চলে আসবে।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَّةٌ {१२} فِيهَا سُرُرٌ مُرْفُوعَةٌ (১৩) وَأَكْوَابُ مُوْضُوعَةٌ {14) وَتُمَارِقُ مصفوفة (১৫) وَزَرَابِكُ مصفوفة (১৫)
"সেথায় থাকিবে বহমান প্রস্রবণ। উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা। প্রস্তুত থাকিবে পানপাত্র। সারি সারি উপাধান। এবং বিছান গালিচা।"
জান্নাতের সুখ হবে অসীম। তবে কেন আমরা বিষয়টিকে গভীরভাবে ভেবে দেখছি না? জান্নাতই যদি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় আর আমরা যদি আল্লাহর কাছে জান্নাতই চেয়ে থাকি, তবে এ দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট যতটা ভারী মনে হয় তার চেয়ে অনেক কম ভারী মনে হওয়ার কথা। অতএব এমনটি ভেবে * দুর্দশাগ্রস্তদের আত্মা শান্তি পাক।
ওহে, যারা এ দরিদ্র জীবন যাপন করছেন বা বিপদে পতিত রয়েছেন, আপনারা নেক আমল করুন, তাহলেই আল্লাহর জান্নাতে বাস করতে পারবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
"তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে। চূড়ান্তগৃহ বাস্তবিক কতই না উত্তম!”